সোয়েব সাঈদ, রামু :: শিষ্য-অনুরাগীদের অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা আর ফুলেল শ্রদ্ধায় চির নিদ্রায় শায়িত হলেন জেলার বরেণ্য শিক্ষাবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রামু কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোশতাক আহমদ। বুধবার (২ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪ টায় নামাজে জানাযা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযাপূর্ব সমাবেশে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের পক্ষে শোকবার্তা পাঠ করেন-রামু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন। এছাড়াও জানাযায় বরণ্যে এ শিক্ষাবিদের স্মৃতিচারণ করেন- সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল, উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি জাফর আলম চৌধুরী, জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, রামু সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হক, কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মরহুমের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমদ, ছেলে শামীম আহসান ভুলু। এতে ইমামতি করেন-মাওলানা আমান উল্লাহ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন- আনছারুল হক ভূট্টো।
জ্ঞানতাপস প্রফেসর মোশতাক আহমদ মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১ টায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ৫ মেয়ে রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধ্যক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
উল্লেখ্য প্রফেসর মোশতাক আহমদ ১৯৪০ সালের ৮ জানুয়ারি রামু উপজেলার মন্ডলপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা রশিদ আহমদ সমবায় কর্মকর্তা এবং মা মুনিরা বেগম গৃহিনী ছিলেন। তিনি ১৯৫৫ সালে রামু খিজারী হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে বিএ অনার্স, ১৯৬৩ সালে ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্ব দেন। কক্সবাজারের পতন হলে পাশর্^বর্তী বার্মায় (মায়ানমার) আশ্রয় গ্রহন করেন। সেখান থেকেও শত্রুসেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। স্বাধীনতার পর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ-মোজাফ্ফর) যোগদান করেন এবং ওই সময় কক্সবাজার জেলা সহ সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে রামু-উখিয়া-টেকনাফ এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।
প্রফেসর মোশতাক আহমদ শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে কক্সবাজার জেলা শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ, ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান, ২০০৩ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে কৃতি শিক্ষাবিদ পুরস্কার এবং সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। শিক্ষা ও সাহিত্যে বিরল প্রতিভাধর এ ব্যক্তিত্বের প্রয়ানে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল শূণ্যতা। প্রফেসর মোশতাক আহমদ রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মুসরাত জাহান মুন্নীর পিতা।
হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের শোক ॥
কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি, বরেণ্য শিক্ষাবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রামু কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোশতাক আহমদের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রামু কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ওসমান সরওয়ার মামুন, সদস্য শহীদুল্লাহ সিকদার, রফিকুল আলম, নুরুল আলম, সাইফুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আলী হায়দার, সহকারি শিক্ষক ওসমান গনি, প্রণব বড়ুয়া, লুৎফুন্নাহার, ছৈয়দ আলম, রহিমা বেগম, মো. আবদুল্লাহ, মোস্তফা কামাল, সরওয়ার কামাল, ফেরদৌসী বেগম, দেবাশীষ চক্রবর্তী, আনজুমান আরা, ওবাইদুল্লাহ, নাছির উদ্দিন ও তারেক রহমান।
শোকবার্তায় নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন-প্রফেসর মোশতাক আহমদ ছিলেন জেলাবাসীর বাতিঘর। তিনি শিক্ষার প্রসারে নিজেকে আজীবন উৎসর্গ করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে সর্বত্র শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে, যা পূরণ হবার নয়। নেতৃবৃন্দ মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং শোকাহত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: